কন্যাশ্রী প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের মেয়েদের জীবন ও অবস্থার উন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা গৃহীত একটি উদ্যোগ, যার মাধ্যমে সেই পিছিয়ে পড়া পরিবারকে নগদ টাকা দিয়ে অর্থনৈতিক সহায়তা করা হয়। যাতে কোনো পরিবার অর্থনৈতিক অসুবিধার কারণে তাদের মেয়ে কন্যার বিয়ে না দিয়ে দেয়। এই কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা গরীব-দুঃস্থ মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য উৎসাহিত করা। এই প্রকল্পের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পটি কি?
18 বছরের বয়সের নিচে যাতে মেয়েদের বিয়ে না হয় সেই কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে। এছাড়াও টাকার অভাবে গরীব দুস্থ পরিবারের মেয়ের উচ্চশিক্ষা যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, সেটাও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুটি প্রকারে বৃত্তি বা টাকা পাওয়া যায়:
- বার্ষিক বৃত্তি ১০০০ টাকা (প্রতি বছর ১০০০ টাকা করে, ২০১৩-২০১৪ ও ২০১৪-২০১৫ সালে এই অর্থ বাৎসরিক ৫০০ টাকা করে ছিল)
- এককালীন ২৫,০০০ টাকা বৃত্তি। (মেয়ের বয়স ১৮ বছর বয়সের পর)।
বার্ষিক বৃত্তি প্রদানের শর্ত
- ছাত্রীর বয়স 13 বছরের বেশি ও 18 বছরের কম হতে হবে।
- ছাত্রীকে অন্তত অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করতে হবে।
- ছাত্রীর পারিবারিক আয় বাৎসরিক এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকার কম হতে হবে, বর্তমানে এই শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে।
- সরকারি বা সরকার অনুমোদিত বা সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত যেকোনো বিদ্যালয় পাঠরতা ছাত্রী এই কন্যাশ্রী প্রকল্পের আবেদন এর সুযোগ পাবে। এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠরতা মেয়েরাও এই প্রকল্পে আবেদনের সুযোগ পাবে।
- ছাত্রীকে অবিবাহিতা হতে হবে।
এককালীন অর্থ প্রদানের শর্ত
- আবেদন করার সময় ছাত্রীর বয়স 18 বছরের বেশি ও 19 বছরের কম হতে হবে।
- ছাত্রীকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক বা ক্রীড়া বিষয়ক যেকোন বিষয়ে কোন নিবন্ধীকৃত প্রতিষ্ঠানে পাঠরতা হতে হবে।
- ছাত্রীকে অবিবাহিতা হতে হবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আবেদনপত্র প্রাপ্তি
সমস্ত মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল কলেজ কন্যাশ্রীর ফর্ম পাওয়া যাচ্ছে। মহকুমা শাসকের অফিস, ব্লক অফিসেও এই ফর্ম পাওয়া যায়। পুরসভা অফিসের কার্যালয় গুলিতেও এই ফর্ম পাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, আশা কর্মীদের কাছ থেকেও এই ফর্ম নিতে পারেন। এর জন্য আপনাকে আলাদা করে কোনো টাকা দিতে হবে না।
আবেদনপত্রের সাথে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে
আবেদনপত্রের সাথে যে সমস্ত ডকুমেন্ট লাগবে তা নিম্ন লিখিত:
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- বয়সের প্রমাণপত্র
- যে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী তার প্রমান পত্র
- পারিবারিক আয়ের প্রমাণপত্র
- অবিবাহিতা হওয়ার প্রমাণপত্র
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বার
অবিবাহিতা হওয়ার প্রমানপত্র
বৃত্তির জন্য আবেদন করার সময় মেয়েটির মা-বাবা বা অভিভাবক একটি আবেদন পত্র লিখে দেবেন যে মেয়েটির অবিবাহিত এবং সেই আবেদনপত্রে মা-বাবা বা অভিভাবকের দরখাস্ত থাকবে। সেটি গেজেটেড অফিসার বা গ্রুপ এ অফিসার, এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কে দিয়ে প্রত্যয়িত করাতে হবে।
বয়সের প্রমাণপত্র ও পারিবারিক আয়ের প্রমাণপত্র
মিউনিসিপ্যালিটি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে বার্থ সার্টিফিকেট ও পারিবারিক আয়ের পত্র নেওয়ার পর তা গেজেটেড অফিসার বা গ্রুপ এ অফিসার বা এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কে দিয়ে প্রত্যয়িত করাতে হবে।
কন্যাশ্রী দিবস
সমগ্র রাজ্য জুড়ে এই প্রকল্পটি উন্নীত করার জন্য ১৪ই আগস্ট কন্যাশ্রী দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। ১৪ই আগস্ট,২০১৩ তারিখে রাজ্যের ব্যাপক অনুষ্ঠানগুলি প্রকল্পটি প্রচারের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতায় এই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সভাপতিত্ব করেন।
আরও পড়ুন – Prochesta Prakalpa App Download
কন্যাশ্রী প্রকল্প স্কলারশিপ – K3
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮ শে জুলাই ২০১৭ তে ঘোষণা করেন যে, কন্যাশ্রী প্রকল্প K3 চালু করা হয়েছে। যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরতা ছাত্রী এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারে। এই কন্যাশ্রী স্কলারশিপ ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় সাহায্য করবে।
ছাত্রীরা যারা K2 স্কিমে যথারীতি নিজেদের নাম নথিভুক্ত করে রেখেছে,শুধুমাত্র তারাই কন্যাশ্রী প্রকল্প K3 স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। K3 স্কিমে আবেদনের জন্য ছাত্রী টিকে যেকোনো আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি 45% বা তার বেশি মার্কস নিয়ে পাস করতে হবে। এরপর সে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রির জন্য অ্যাডমিশন নিলেই এই প্রকল্পের সুবিধের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কন্যাশ্রী প্রকল্প K3 তে সায়েন্স বিভাগ নিয়ে পাঠরতা ছাত্রী মাসিক ২৫০০ টাকা করে এবং আর্টস স্ট্রিম নিয়ে পাঠারতা ছাত্রী মাসিক 2000 করে টাকা পাবে। কন্যাশ্রী প্রকল্প k3 অ্যাপ্লাই করার জন্য কোন বয়সের উর্ধ্বসীমা নেই।
কন্যাশ্রী প্রকল্প K3 স্কিমে অনলাইন অ্যাপ্লাই করতে পারবেন Swami Vivekananda Merit-cum-Means Scholarship ওয়েবসাইট থেকে।
একটি নতুন নির্দেশিকা জারি হয়েছে জেলায় জেলায়। এই নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী বেসরকারি স্কুলের ছাত্রীরা এই প্রকল্পের আওতায় আসবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে বেসরকারি স্কুলের ছাত্রীরা প্রথমে অনলাইনে আবেদন করবে। এরপর জেলা প্রশাসন থেকে বেসরকারি স্কুলের নাম পাঠানো হবে রাজ্য সরকারের কাছে। রাজ্য সরকার ওই বেসরকারি স্কুলের নাম কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য অনুমোদন দিলে একটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে ওই স্কুলকে। এরপর ওই বেসরকারি স্কুলের সকল ছাত্রী কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসবে। এতদিন বেসরকারি স্কুলের মেয়েরা কন্যাশ্রী প্রকল্প থেকে বঞ্চিত ছিল, এবার তারাও কন্যাশ্রী পাবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্প সম্পর্কে আরও জানতে ও আপনার কন্যাশ্রী অ্যাপ্লিকেশন ট্র্যাক করতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিসিট করুন।
আপনি খুব ভালো করে লিখেছেন। আমি আপনার লেখা পরে আমার কিছু ফ্রেন্ডস কে পাঠালাম তারা অবস উপকৃত হবে। আমি আশা করি আপনি আরো ভাল কিছু পোস্ট লিখবেন