প্রতিদিন উৎপাদন শিল্প, মোটরগাড়ি শিল্প, খাদ্যদ্রব্যের শিল্প ও চিকিৎসা শিল্পের কাজ বেড়েই চলেছে, তাই তার সাথে জোগান দিয়ে বাড়ছে রাবার হ্যান্ড গ্লাভসের ব্যবহার। শুধুমাত্র শিল্পের প্রসাধন হিসেবেই নয়, বাড়ির কাজেও এই হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার হয় যেমন ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় ধোয়ার সময়, বাড়ির মেঝে ধোয়া বা পরিষ্কার করার সময়, জমিতে সার বা কিটনাশক দেওয়ার সময়। এই গ্লাভস মূলত আমাদের বাইরের তাপমাত্রা, ইলেকট্রিক শক, কেমিক্যাল সংক্রমণ, কোনো জিনিসের সাথে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে, চিকিৎসাক্ষেত্রে হাতকে পরিশুদ্ধ রাখার কাজে এটি ব্যবহার করা হয়। ভারতে খুব দ্রুত গতিতে রাবার হ্যান্ড গ্লাভসের ব্যবহার বাড়ছে, অন্যান্য দেশে এই ব্যবসার বৃদ্ধি হার যেখানে ২.৫% ভারতে সেখানে প্রায় এই হার ৭%। তাই ভবিষ্যতেও যে ব্যবসা খুব লাভজনক হতে চলেছে এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
Post Contents
উপযুক্ত জায়গা বাছাই:
এই ব্যবসার জন্য আপনার যথেষ্ট পরিমাণ জায়গার দরকার হবে। মিনিমাম ১৫০ স্কোয়ার মিটার একটি আচ্ছাদিত ঘরের প্রয়োজন যেখানে আপনার মেশিনারি দ্রব্য সেট আপ করতে পারবেন। এছাড়া ওই জায়গায় জলের ব্যবস্থা ও ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই খুব ভালো হতে হবে। এছাড়াও আপনাকে কাঁচামাল রাখার স্টোর, প্যাকেজিং করার জায়গা ও উৎপাদিত দ্রব্য রাখার জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।
কাঁচামাল:
রাবার গ্লাভস বানানোর জন্য প্রধান কাঁচামাল হল রাবারের সেন্ট্রিফিউজড ল্যাটেক্স বা কেন্দ্রীভূত ক্ষীর। এই কেন্দ্রীভূত ক্ষীর বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া আপনি বড়ো স্কেলে ব্যবসাটি করতে চাইলে কাঁচা রাবারের রস থেকে রাবারের এই কেন্দ্রীভূত ক্ষীর তৈরি করতে পারেন। হ্যান্ড গ্লাভসের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল গুলি হল কেন্দ্রীভূত ক্ষীর ৬০% ডি আর সি, পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড, সালফার, জিঙ্ক অক্সাইড, জেড ডি সি, ফরমিক অ্যাসিড, টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড, চীনামাটি, অভ্রক,ভেজিটেবল তেল ইত্যাদি। এছাড়াও আপনাকে প্যাকিং করার দ্রব্য কিনতে হবে।
প্রয়োজনীয় মেশিন ও যন্ত্রপাতি:
- ৩ হর্সপাওয়ার মোটরের সাথে বল মিল মেশিন
- কমপাউন্ডিং ট্যাঙ্ক (১০০ লিটার ক্যাপাসিটি)
- ডিপিং ভ্যাট(১০০ লিটার ক্যাপাসিটি)
- হট এয়ার ওভেন
- ডিমনিজিং ট্যাঙ্ক
- গ্লাভসের কাঠামো
- ওজন স্কেল
পদ্ধতি:
রাবারের হ্যান্ড গ্লাভস তিন প্রকারের হয় (১) সার্জিক্যাল গ্লাভস (২) ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লাভস (৩) ডোমেস্টিক গ্লাভস। এই তিনটিই তৈরির প্রসেস একই রকম। এগুলো তৈরি করা কোনো জটিল পদ্ধতি নয়। শুধুমাত্র আলাদা আলাদা গ্লাভসের জন্য কাঁচামালের পরিমাণ ও মিশ্রণ আলাদা আলাদা তৈরি করতে হয়।
প্রথমে যৌগিক ক্রিম বানাতে হয়, যা রাবারের সেন্ট্রিফিউজড ল্যাটেক্সের সাথে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থগুলো যুক্ত করে বানানো হয়। এরপর রাবারের কাঠামোগুলো ওই যৌগিক ক্রিমে ধীরে ধীরে ডোবানো হয়, এতে ওই কাঠামোগুলোতে রাবারের পাতলা স্তর তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াটি পুনরায় করা হয়, এতে রাবারের স্তরটি পুরু হয়ে যায়। এরপর এই রাবারের খাঁচটি ৭০°সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় শুকনো করা হয় এবং ১২ °সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় ভলক্যানাইজ করা হয়। এরপর কাঠামো থেকে রাবারের গ্লাভস গুলি ছাড়িয়ে নেওয়া হয় এবং পরিদর্শন করা হয়। এরপর এগুলির কোয়ালিটি চেক হয় এবং ক্লোরিন দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। তারপর প্যাক করে বাজারে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়।
মেশিনের দাম:
পুরো প্ল্যান্ট স্হাপন করতে প্রায় ৪-৫ লাখ টাকা খরচ হবে।
মেশিন কেনার ঠিকানা :
(১) বল মিল মেশিন পেয়ে যাবেন ওরিয়েন্টাল মেশিনারি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে যার ঠিকানা হল –
দোকান নং ২৫, আর এন মুখার্জী রোড, লাল বাজার, উত্তর চৌরঙ্গী , কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ -৭০০০০১
ফোন নম্বর- ৭০৪৪০৯৫৩২৬
(২) এয়ার ওভেন কলকাতার বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রিট ও বিডন স্ট্রিটের যে কোনো দোকান থেকে নিতে পারেন।
(৩) গ্লাভস তৈরির রাবার ও অন্যান্য কাঁচামাল আপনি কলকাতার গোবিন্দ খটিক রোড, বেলেঘাটা ইত্যাদি জায়গায় পেয়ে যাবেন।
অবশ্যই পড়ুন : নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে –
আপনার ব্যবসার জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন, লাইসেন্স ও মেশিন কেনার ঠিকানা
লোন:
এই ব্যবসার প্রজেক্টের উপর আপনি লোনের জন্যও অ্যাপ্লাই করতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনেরশন প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আপনি যে কোনো রাজ্য থেকে এই লোনের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে বাংলা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় ও লোনের জন্য আবেদন করা যায়।
আরও পড়ুন: কীভাবে মুদ্রা লোনের জন্য আবেদন করতে হয়।