আমরা সবাই জানি যে, সরকার পলিথিন ও থার্মোকল জাতীয় দ্রব্যের উপর প্রতিবন্ধকতা লাগানোর ফলে বাজারে এই জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার খুব কমে গেছে এবং ধীরে ধীরে এই পলিথিন জাতীয় দ্রব্যের প্রচলন এবং তাকে ঘিরে যে শিল্প ও ব্যবসা একেবারে বসে যাবে। তাই আমাদের আবার সেই পুরনো পাতার ও কাগজের তৈরি প্লেট ও বাটির ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। তাই এক্ষেত্রে, পাতার তৈরি প্লেট ও বাটির ব্যবসা খুব ভালো চলবে এবং এই ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুব ভালো হবে, এটা আশা করা যায়। এই প্লেট ও বাটি তৈরি করতে অনেক পাতাই ব্যবহার করা যেতে পারে তবে তার মধ্যে সহজলভ্য ও সস্তা হল শালপাতার। এই শাল পাতা জঙ্গল এলাকার অধিবাসীদের কাছ থেকে অনেক সস্তায় আপনি কিনতে পেয়ে যাবেন। এই শালপাতার প্লেট সমস্ত ধরনের প্লেটের থেকে সবচেয়ে সস্তা এবং পরিবেশের সাথে খুব সহজেই পচনশীল হয়ে মিশে যায়, এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে খুব সহায়ক হয়।
এই প্লেটগুলির চাহিদা সারাবছরই থাকে, কারণ এগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় যেমন বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনে, ধর্মীয় উৎসবে, সামাজিক উৎসবে, হোটেল, বাজারে, রেস্টুরেন্টে । এবং ইদানীং এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে কারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মেশিনের সাহায্যে শাল পাতা দিয়ে এই প্লেট ও বাটি তৈরি করে ও তা বাজারে বিক্রি করে বা দোকানে সাপ্লাই করে আপনি অনেক ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারেন। শুধু তাই নয়, এই ব্যবসার মাধ্যমে আপনি অনেক মহিলাকে এই কাজ দিয়ে তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে পারবেন।
Post Contents
কাঁচামাল:
শাল পাতার প্লেট তৈরি করার জন্য প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় শাল পাতা। এই শাল পাতা আপনি জঙ্গল বা ফরেস্ট রেঞ্জ এলাকার অধিবাসীদের কাছ থেকে সস্তায় কিনতে পেয়ে যাবেন। পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় এই শাল গাছের জঙ্গল পাওয়া যায়, এছাড়া উত্তরে জলপাইগুড়ি জেলায় রয়েছে সালুগারা রেঞ্জ। উত্তরবঙ্গের তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে বিভিন্ন কমিটি রয়েছে যারা এই বনাঞ্চলের সবুজ গাছ গাছালি রক্ষা করা ছাড়াও স্হানীয় মানুষ ও মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য সহায়তা করে থাকে। আর এভাবেই বহুদিন ধরে চলে আসছে এই শাল থেকে প্লেট, বাটি তৈরির কাজগুলি। এই অঞ্চলের একটি গ্রাম প্রায় প্রতি সপ্তাহে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার শাল পাতা সংগ্রহ করে থাকে। এই শালপাতা সরবরাহ করে তারা প্রতি ১০০ সংখ্যায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টাকার মতো পেয়ে থাকে।

শালপাতা থেকে প্লেট ও বাটি তৈরির জন্য শালপাতাগুলি জোড়া লাগাতে হয়। এজন্য আগে ব্যবহার করা হত নারিকেল, তাল বা সুপারি গাছের ডালের পাতা ছাঁটাইয়ের পর যে কুঁচি পাওয়া যেত, তা। এখন অবশ্য পাতাগুলি মেশিন দিয়ে সেলাই করে নেওয়া হয়, এতে পাতাগুলি দেখতে ভালো হয় ও মজবুতি বাড়ে।
প্রয়োজনীয় মেশিন ও তার দাম:
শালপাতা থেকে প্লেট ও বাটি তৈরির জন্য দুই রকমের মেশিন পাওয়া যায় – (১) হস্তচালিত (২) মোটরচালিত
হস্তচালিত মেশিনের দাম প্রায় ১২,০০০ টাকা ও মোটরচালিত মেশিনের দাম প্রায় ৩৫,০০০ টাকা।
এছাড়াও বিভিন্ন মাপের থালা বা প্লেট ও বাটি তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন আকারের ডাইস এর।
- ১৪ ইঞ্চি ডাইস এর দাম প্রায় ৩,০০০ টাকা।
- ১০ ইঞ্চি ডাইস এর দাম প্রায় ২,৫০০ টাকা।
- ৮ ইঞ্চি ডাইস এর দাম প্রায় ২,০০০ টাকা।
- ৪ ইঞ্চি ডাইস এর দাম প্রায় ১,৫০০ টাকা।
পদ্ধতি:
প্রথমে শালপাতা গুলি কিছুক্ষণ জলে ডুবিয়ে রেখে দিন। তারপর তা তুলে এনে জল ঝরে গেলে সেটি সেলাই মেশিনের সাহায্যে সেলাই করে নিন। থালা বা প্লেট তৈরি করার জন্য ১০ টি পাতার প্রয়োজন হয় ও বাটি তৈরি করার জন্য ৬ টি পাতার দরকার হয়। এরপর, এই সেলাই হয়ে যাওয়া পাতাটি মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে। এরপর মেশিনটি চালু করলে মেশিনটি পাতাটিকে ডাইসের সাথে চাপ ও তাপ দিয়ে ডাইসের আকারের প্লেট ও বাটি তৈরি করে দেবে। পাতাটিকে আরো মজবুত করতে অনেকে পাতার নিচের দিকে একটি পাতলা কাগজের স্তরও ব্যবহার করে থাকে। মেশিনের সাহায্যে এই কাগজের পাতাটি তাপ ও চাপে শাল পাতার প্লেটের সাথে চিপকে যায়। এতে পাতার প্রোডাকশন কস্ট বাড়বে ও বিক্রির দামও । সাধারণ এই শাল পাতার প্লেট বাজারে ১০০ সংখ্যা প্রায় ৭০ টাকায় বিক্রি হয়।
অবশ্যই পড়ুন : নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে –
আপনার ব্যবসার জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন, লাইসেন্স ও মেশিন কেনার ঠিকানা
লোন:
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনেরশন প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আপনি যে কোনো রাজ্য থেকে এই লোনের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে বাংলা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় ও লোনের জন্য আবেদন করা যায়।
এছাড়াও আপনি মুদ্রা লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।