Saturday, July 27, 2024
Homeকৃষি ব্যবসা'মাশরুম চাষের' ব্যবসা করে প্রতি মাসে রোজগার লাখ টাকা

‘মাশরুম চাষের’ ব্যবসা করে প্রতি মাসে রোজগার লাখ টাকা

স্বল্প ও ন্যূনতম বিনিয়োগে যদি আপনি একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার চিন্তা করছেন, তবে মাশরুম চাষ আপনার জন্য একেবারে উপযুক্ত। মাশরুম চাষের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত খুব ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন, এর জন্য দরকার আপনার কার্য কুশলতা, পরিশ্রম ও পরিচর্যা।

যেহেতু এই মাশরুম চাষ আমাদের জৈবিক পরিবেশকে কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত করে না, তাই সরকার ও এই চাষের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করে থাকে এবং নানা প্রকার ভর্তুকি ও দিয়ে থাকে। তাই বিপুল সংখ্যক কৃষক এই ব্যবসাকে অনুসরণ করে লাখ লাখ টাকা কাটাচ্ছেন। আপনিও সহজেই খুব কম সময়ে , কম মূলধনে এবং কম জায়গার উপর এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। প্রথমে ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় জায়গা নিয়ে বড় করে ব্যবসাটি স্হাপন করবেন।

অনেক কোম্পানি আছে যারা আপনাকে মাশরুম চাষের সম্পূর্ণ গাইড থেকে শুরু করে আপনার মাশরুম উৎপাদনের পর তা কিনেও নেয়, এর ফলে আপনি এই চাষে নিরাপত্তা অনুভব করতে পারেন।

মাশরুম চাষ সহায়তা প্রদান কারী কিছু কোম্পানির নাম ও ঠিকানা:

(1) MPG e-Business Pvt. Ltd
Address: Park Lane Road, H. No.-608, Sen Releigh Road, Asansol, Burdwan, West Bengal 713305
phn no .. +9181012 67659
website: https://mpgebusiness.com/index.php

(2) Microfungi – The Mushroom Expert
Address: 9, S D Katra, Munshi Bazar, 
Asansol, West Bengal 713301
Phone:  +9196815 0507

(3) Bsk Agro Farm
Address: Barackpore Main Rd Kolkata, Kajibari, Uttarpara, Barasat, Kolkata, West Bengal 700126
Phone:  +9198300 27967

মাশরুমের প্রকারভেদ:

ভারতে সাধারণত চার ধরনের মাশরুম চাষ হয়। এগুলি হল-
(১) বটন (বোতাম) মাশরুম
(২) পোর্টোবেলো মাশরুম
(৩) ধিংরি (ঝিনুক) মাশরুম
(৪) ধানের খড়ের মাশরুম
এদের মধ্যে বাটন (বোতাম) মাশরুমটি সর্বাধিক জনপ্রিয়, তাই উচ্চ বাজারের সম্ভাবনার কারণে এটি ভারতে ব্যাপকভাবে চাষ হয়।

মাশরুমের স্বাস্থ্য উপকারিতা:

মাশরুম খাওয়া বিভিন্নভাবে উপকারী কারণ এর পুষ্টিগুণ অনেক। আসুন মাশরুমের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক –

(১) মাশরুম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
(২) মাশরুমের পুষ্টিগুণ বেশি, তাই এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
(৩) মাশরুম স্তন ক্যান্সারের মত কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সক্ষম।
(৪) মাশরুম ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক।
(৫) মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, ফাইবার রয়েছে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
(৬) মাশরুমে ভিটামিন বি ২ ও বি ৩ রয়েছে যা শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
(৭) মাশরুম ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য এটি পেটের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
(৮) মাশরুমে ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায় যা কেবলমাত্র মাছ-মাংস জাতীয় খাবারে পাওয়া যায়, যা শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।

মাশরুম

মাশরুম চাষের জন্য প্রধানত পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়।সেগুলো হল –
(ক) কম্পোস্ট তৈরি
(খ) মাশরুমের বিজ বপন করা
(গ) কেসিং
(ঘ) জলসেচন করা
(ঙ) শস্য সংগ্রহ করা

এক এক করে সংক্ষেপে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করব।

(ক) কম্পোস্ট তৈরি:

মাশরুম চাষে ভালো ফসল উৎপাদনের জন্য একটি ভালো কম্পোস্ট তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সরাসরি মাশরুমের গুণগত মান ও তার ওজনের উপর প্রভাব ফেলে। আপনার কম্পোস্ট যত বেশি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর হবে আপনার মাশরুমের উৎপাদন তত ভালো হবে। মাশরুমের কম্পোস্ট তৈরি করার জন্য ধানের খড়, গমের খড় বা ক্যাস্টর খড় সব চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।খড়টি আপনি খুব সহজেই অন্যের কাছ থেকে কিনে নিতে পারবেন বা নিজের থাকলে খুবই ভালো। এবার খড়টিকে কম্পোস্ট তৈরি করতে হবে। কম্পোস্ট সংরক্ষণ এবং এর আদ্রতা বজায় রাখার জন্য একটি কম্পোস্ট বিন তৈরি করুন। এরপর এই কম্পোস্ট বিনে কয়েকটি জিপসাম যুক্ত করুন। কম্পোস্ট বিনে ভরাট করে জল ভরে প্রায় দুই তিন দিন রাখুন, এতে খড়গুলি  আদ্রতা অর্জন করে। আদ্রতা এই কম্পোস্ট টিকে দ্রুত স্বাস্থ্যকর কম্পোস্টে পরিণত হতে সাহায্য করে। কম্পোস্টের নাইট্রোজেন পরিমাণ বাড়ানোর জন্য এটি শুকানোর সময় এর সাথে কিছুটা ইউরিয়া যুক্ত করতে হবে। এই প্রস্তুত কম্পোস্টটি ভালো করে দুই থেকে চার দিন শুকিয়ে নিন, এতে এর মধ্যে থাকা অ্যামোনিয়া উপাদানগুলো বেরিয়ে যায়।

(খ) কম্পোস্টের মধ্যে মাশরুমের বিজ বপন করা:

মাশরুমের বিজ বাড়িতেও তৈরি করা যায় – গম বা জোয়ার বিজ থেকে এটি তৈরি হয়। কিন্তু উন্নত গুণগত মানের মাশরুম বিজ পেতে হলে তা বাজার থেকে ভালো সাপ্লাই কারির কাছ থেকে ল্যাবের তৈরি বিজ কিনে নেওয়াই ভালো। উন্নত মানের বিজ পাওয়ার পর বিজটি প্রস্তুত কম্পোস্টের সাথে ভালভাবে মিশ্রিত করতে হবে। দেখতে হবে, কম্পোস্টে আদ্রতার পরিমাণ যেন ৫০% এর উপর থাকে, এতে মাশরুমের বিজে থাকা মাইসেলিয়াম গুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এরপর ২০ কেজির করে পলিথিনের ব্যাগ তৈরি করে ওই বিজ সহ কম্পোস্টটি ভরে অন্ধকার ঘরে রাখতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা ২৫-২৮°C  মাশরুমের দ্রুত বিকাশের জন্য আদর্শ। প্রতিদিন একবার করে মাশরুমের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করুন।

(গ) কেসিং:

কম্পোস্ট ভরা ব্যাগগুলির একটি কেসিং করা উচিত, এটি জল ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এতে হালকা জিপসামের সাথে কোকো কয়ার মিশ্রিত করলে ব্যাগগুলির জলধারণ ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তোলে।

(ঘ) জলসেচন:

মাশরুম গাছ গুলি জল প্রেমময় হয়। মাশরুম উদ্ভিদে নিয়মিত জল দেওয়া উচিত যাতে তারা নরম থাকে, শুকিয়ে শক্ত না হয়ে যায়। দিনে অন্তত তিনবার এই মাশরুম গাছগুলিকে হালকা হালকা জল দিতে হয়। তবে বেশি পরিমাণ জল দিয়ে দিলে নতুন আগত মাশরুমের লোকসান হতে পারে। এজন্য স্প্রিং কলার ব্যবহার করে জল দিলে এটি কম্পোস্টের উপর সমান ও সুন্দরভাবে জলটি ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

(ঙ) শস্য সংগ্রহ করা:

খুব অল্প সময়ের মধ্যে, কম্পোস্টিংয়ের প্রায় দুই মাস পরে, আপনি স্বাস্হ্যকরভাবে বেড়ে উঠা এই মাশরুম সংগ্রহ করতে পারবেন। সাধারণত, প্রথম ফসল সংগ্রহ শুধুমাত্র অতিমাত্রায় বেড়ে উঠা মাশরুমের জন্য করা হয়।এরপর  এক সপ্তাহ বা দশ দিনের ব্যবধানে নিয়মিত আপনি এর সংগ্রহ করতে পারেন। মাশরুমের বাছাইয়ের সময় যত্ন নিন। এই স্বাস্হ্যকর মাশরুমটি ধীরে ধীরে হাত দিন, কারণ এগুলি ভঙ্গুর প্রকৃতির।

বাণিজ্যিক মাশরুম চাষে প্রতি বর্গফুটে প্রায় ১০ -১৫ কেজির মতো ফলন হয় আর ১ কেজি মাশরুমের বাজার দাম কমপক্ষে ১৫০ টাকা। তাই, প্রতি বর্গফুটে প্রায় ১৫০০ টাকার মাশরুম উৎপাদন করা যায়। আপনার মাশরুম চাষে আয় আপনার ফার্ম পরিচালনার দক্ষতা, যত্ন ও পরিশ্রমের উপর নির্ভর করছে।

মাশরুম সংগ্রহ

মাশরুমের যত্ন ও ব্যবস্থাপনা:

মাশরুম চাষের জন্য কি সূর্যের আলোর প্রয়োজন? না, মাশরুমগুলি একটি ছত্রাক এবং এগুলো ক্লোরোফিল বহন করে না তাই এর বৃদ্ধির জন্য সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয় না। বিজের ভালো বিকাশের জন্য ঘরটি যতটা সম্ভব অন্ধকার করার চেষ্টা করুন। আপনার মাশরুমগুলির নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য এলইডি লাইটের ব্যবহার করতে পারেন।

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হল:

  • আপনার মাশরুম চাষের ঘরটির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
  • মাশরুমের বিজ বপন করার আগে সর্বদা আপনার হাত অ্যান্টিসেপটিক বা সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • আপনার কম্পোস্ট তৈরি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, কম্পোস্টটি যেন কোনোভাবেই সংক্রামিত না হয়। নচেৎ এটি মাশরুমের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।
  • জুতো, চপ্পল ইত্যাদি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করবেন না।
  • মাশরুম পোকার পতঙ্গ এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু দ্বারা আপনার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কিটনাশক স্প্রে আপনার ফসলকে রক্ষা করবে।
  • আপনার মাশরুমের ঘরের দরজাটি সবসময় বন্ধ করে রাখুন কারণ যদি সূর্যের আলো পৌঁছায় তবে এটি মাশরুমের আদ্রতার পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে পারে। আদ্রতার পরিমাণ বজায় রাখার জন্য জানালায় ভেজা চাদর ব্যবহার করতে পারেন।
  • মাশরুম বাছাই করার সময় ধীরে ধীরে বাছতে হবে, যাতে অন্য নতুন মাশরুম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাছাই করার পর এগুলো শীতল স্হানে সংগ্রহ করে রাখতে হবে। উচ্চ তাপমাত্রা মাশরুমের গুণগত মান খারাপ করে দিতে পারে।

মাশরুমের গুণগত মান কখন খারাপ হয়?

মাশরুমের গুণগত মান বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, খারাপ মানের মাশরুম স্বাস্হ্যকর ও তাজা মানের মাশরুমের মতো কখনো বেশি অর্থ উপার্জন করে দিতে পারবে না। মাশরুমগুলি খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণগুলো হল:
সঠিকভাবে বাছাই না হওয়া, বেশি পরিমাণে জল দিয়ে দেওয়া, মাশরুম সংরক্ষণে যত্ন না নেওয়া।
মাশরুমগুলির সংরক্ষণে সঠিকভাবে যত্ন না নিলে এর রং সাদা থেকে ফ্যাকাশে হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় হাতের স্পর্শের কারণে বা ভাইরাস ও অণুজীবের আক্রমণের কারণেও খারাপ হয়ে যায় এবং এর থেকে খারাপ গন্ধ বের হয়।

পরিশেষে বন্ধুরা, মাশরুম চাষ আজ বহু সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে প্রাধান্য পাচ্ছে এবং  লক্ষ লক্ষ মানুষ ভালো মুনাফা অর্জন করছে। স্বল্প মূলধন, কম জায়গা, কম লোকজনের মাধ্যমে এই ব্যবসা আজকাল যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

‘খাতা’ তৈরি করে ব্যবসা

আজকের দিনে খাতার ব্যবহার স্কুল-কলেজ, অফিস- আদালত , দোকান - পত্র সর্বত্রই সারাবছর আছে।  তাই,  আমরা লাইন টানা,  সাদা,  বিঞ্জানের প্র্যাকটিক্যাল খাতা,  হিসাব পত্রের...
- Advertisment -

Most Popular